Tuesday, January 4, 2022

সরকারি সকল জমির তথ্য পেতে এখানে ক্লিক করুন https://www.eporcha.gov.bd

https://www.eporcha.gov.bd গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের নিমিত্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সরকার এ খাতকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বব্যাপী প্রয়োগ ও ব্যবহারে কারিগরি সহায়তা নিশ্চিতকরণ; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা সমূহ প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানো, অবকাঠামো নিরাপত্তা বিধান; রক্ষণাবেক্ষণ; বাস্তবায়ন; সম্প্রসারণ মান নিয়ন্ত্রণ ও কম্পিউটার পেশাজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ই-সার্ভিস প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৩১ জুলাই, ২০১৩ তারিখে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর’ গঠন করা হয়। বাংলাদেশের জমির পর্চা ম্যাপ ও অন্যান্য সরকারি লিংক নিন্মে দেয়া হলো http://adf.ly/12249439/www.google.com

Friday, January 3, 2020

হিন্দু আইনে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের নিয়ম http://lyksoomu.com/1CBu3

হিন্দু আইনে দুই ধরনের উত্তরাধিকার পদ্ধতি চালু আছে: (ক) মিতক্ষরা পদ্ধতি (খ) দায়ভাগ পদ্ধতি। বাংলাদেশে দায়ভাগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এ আইন অনুযায়ী, যারা মৃত ব্যক্তির আত্মার কল্যানের জন্য পিণ্ডদানের অধিকারী, কেবলমাত্র তারাই মৃত ব্যক্তির সপিণ্ড এবং যোগ্য উত্তরাধিকারী। নিম্নে মোট ৫৩ জন সপিন্ডগণের তালিকা ক্রমানুসারে দেওয়া হলঃ ১। পুত্র ২। পুত্রের পুত্র ৩। পুত্রের পুত্রের পুত্র ৪। স্ত্রী, পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রী। ৫। কন্যা ৬। কন্যার পুত্র ৭। পিতা ৮। মাতা ৯। ভাই, সহোদর ভাই না থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই। ১০। ভাই এর পুত্র, সহোদর ভাই না থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই এর পুত্র ১১। ভাই এর পুত্রের পুত্র, সহোদর ভাই না থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই এর পুত্রের পুত্র। ১২। বোনের পুত্র ১৩। পিতার পিতা ১৪। পিতার মাতা ১৫। পিতার ভাই ১৬। পিতার ভাইয়ের পুত্র ১৭। পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র ১৮। পিতার বোনের পুত্র ১৯। পিতার পিতার পিতা ২০। পিতার পিতার মাতা ২১। পিতার পিতার ভাই ২২। পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্র ২৩। পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র ২৪। পিতার পিসির পুত্র ২৫। পুত্রের কন্যার পুত্র ২৬। পুত্রের পুত্রের কন্যার পুত্র ২৭। ভাইয়ের কন্যার পুত্র ২৮। ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র ২৯। খুড়ার কন্যার পুত্র ৩০। খুড়ার পুত্রের কন্যার পুত্র ৩১। পিতার খুড়ার কন্যার পুত্র ৩২। পিতার খুড়ার পুত্রের কন্যার পুত্র ৩৩। মাতার পিতা (নানা) ৩৪। মাতার ভাই (মামা) ৩৫। মাতার ভাইয়ের পুত্র (মামার পুত্র) ৩৬। মাতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র (মামার পুত্রের পুত্র) ৩৭। মাতার বোনের পুত্র (মাসির পুত্র) ৩৮। মাতার পিতার পিতা ৩৯। মাতার পিতার ভাই ৪০। মাতার পিতার ভাইয়ের পুত্র ৪১। মাতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র ৪২। মাতার পিতার বোনের পুত্রের পুত্র ৪৩। মাতার পিতার পিতার পিতা ৪৪। মাতার পিতার পিতার ভাই। ৪৫। মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্র ৪৬। মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র ৪৭। মাতার পিতার পিতার বোনের পুত্র ৪৮। মাতার ভাইয়ের কন্যার পুত্র ৪৯। মাতার ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র ৫০। মাতার পিতার ভাইয়ের কন্যার পুত্র ৫১। মাতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র ৫২। মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের কন্যার পুত্র ৫৩। মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র মোট ৫৩টি শ্রেণির মধ্যে মহিলা শ্রেণী ৫ টি। ১। স্ত্রী, পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রী (তালিকায় যার স্থান ৪র্থ)। ২। কন্যা (তালিকায় যার স্থান ৫ম)। ৩। মাতা (তালিকায় যার স্থান ৮ম)। ৪। পিতার মাতা ( তালিকায় যার স্থান ১৪ তম)। ৫। পিতার পিতার মাতা ( তালিকায় যার স্থান ২০ তম)। এই ৫ শ্রেণীর মহিলা কোন সম্পত্তি পেলেও সীমিত কিছু শর্ত (যেমন- মৃতের শ্রাদ্ধ) ছাড়া তা হস্তান্তর করতে পারে না। তারা মুলত জীবনস্বত্ব ভোগ করতে পারে। তাদের মৃতুর পর সম্পত্তি পুর্ব মালিকের কাছে ফিরে যাবে, যা নিকটস্থ উত্তরাধিকারী পাবে। কোন পুরুষ উত্তরাধিকারী সম্পত্তি না পাওয়া পর্যন্ত এভাবে সম্পত্তি বারবার মৃত মুল মালিকের কাছে ফিরে যাবে।১ থেকে ৪ নম্বর ক্রমিক পর্যন্ত কেউ জীবিত না থাকলে (৫ নম্বর ক্রমিকের) কন্যা সম্পত্তি পাবে। কন্যাদের মধ্যে কুমারী কন্যার দাবী অগ্রগণ্য, এর পর পুত্রবতী বা পুত্র সম্ভবা কন্যাদের দাবী। কন্যা উত্তরাধিকার সুত্রে সম্পত্তি পেলে তার মৃত্যুতে তার পুত্র সন্তান সম্পত্তি পাবে। তবে কন্যার পুত্র না থাকলে পুত্রের পুত্র কোন সম্পত্তি পাবে না। এক বা একাধিক পুত্র থাকলে তারাই সমুদয় সম্পত্তি পাবে। নিকটবর্তী পুরুষ ওয়ারিশ থাকলে পরবর্তীরা সম্পত্তি পাবে না, যেমন পুত্র থাকলে পুত্রের-পুত্র সম্পত্তি পাবে না। মৃত ব্যক্তির পুত্র ও স্ত্রী থাকলে, স্ত্রী এক পুত্রের সমান অংশ পাবে। একাধিক স্ত্রী থাকলে স্ত্রীর অংশ স্ত্রীদের মধ্যে তুলাংশে বন্টন হবে। স্ত্রী যেরূপ অংশ পাবে, পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী বা পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রীও অনুরূপ অংশ পাবে। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টনের সময় অংশীদারদের মধ্যে যদি কোন অংশীদার মারা যায়, তবে মৃত ব্যক্তির জীবিত উত্তরাধিকারগণ ওয়ারিশ হবে। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী জীবনস্বত্ব (Life Interest) ভোগ করেন। তার মৃত্যর পর উক্ত সম্পত্তি পুত্রদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়। ৬। একমাত্র হিন্দু ধর্মে দত্তক পুত্র গ্রহনের বিধান আছে। তাই দত্তক পুত্র স্বাভাবিক পুত্রের (১/৩) তিন ভাগের এক ভাগ পাবে। ৭। হিন্দু আইনে সন্ন্যাসী উত্তরাধিকার হয় না। সন্ন্যাসীকে সংসার ত্যাগী হিসাবে মৃত ধরা হয়। ৮। অন্ধ, বধির, মূক, অঙ্গহীন, পুরুষত্বহীন এবং হাবাগোবা পুরুষ ও মহিলাগণ হিন্দু আইনে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত। এমনকি দূরারোগ্য কুষ্ঠ-ব্যধীগ্রস্ত ব্যক্তিগণও উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত। আইনের দৃষ্টিতে তাদেরকে মৃত হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বৈধ সন্তান, পিতামহ ও পিতামহীর উপর উত্তরাধিকারিত্ব বর্তায়। ৯। স্বামী অসতী স্ত্রী রেখে মারা গেলে, সেই অসতী স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি পাবে না। তবে বিধবা স্ত্রী আইন সঙ্গতভাবে সম্পত্তি পাওয়ার পর অসতী হলে প্রাপ্ত সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবে না। অসতীত্বের কারনে মাতাও উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয়। তবে অসতীত্বের কারনে কোন নারী, স্ত্রী-লোকের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয় না। ১০। কোন হিন্দু লোক ধর্মান্তরিত হলে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয়। ১১। হত্যাকারী এবং তার ওয়ারিশ মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবে।

উত্তরোধিকার আইন: সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৯ জুলাই ২০১৪ http://lyksoomu.com/1CBu4

উত্তরোধিকার আইন: সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৯ জুলাই ২০১৪ হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে স্বীকৃত উত্তরাধিকারীদের অধিকারের বিভিন্ন লঙ্ঘন ও প্রতিকার দলিল জালিয়াতি কি ও কিভাবে হয়: একজন মৃত ব্যক্তির একাধিক ওয়ারিশ থাকতে পারে। কিন্ত সেই ওয়ারিশেদর বঞ্চিত করার জন্য পাশ্ববর্তী প্রতিবেশী অথবা স্থানীয় প্রভাবশালী লোকেরা নিজের নামে দলিল তৈরী করে প্রকৃত ওয়ারিশেদর মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা থেকে বঞ্চিত করে থাকে। সংশ্লিষ্ট আইন ও ব্যাখা: দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪৬৩ ধারা হতে ৪৭৭ ধারা পর্যন্ত জ্বালিয়াতি সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত বিধান রয়েছে । দলিলটি যদি সম্পুর্ণ বা আংশিক মিথ্যাভাবে তৈরী করা হয় তাহলে একে জ্বালিয়াতি বলা যাবে। সম্ভাব্য জ্বালিয়াতি সংঘটনের প্রস্তুতিকে জালিয়াতি বলা যায়না। ধারা ৪৬৩ অনুসারে যদি কোন ব্যক্তি জনসাধারণের বা কোন ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতিসাধনের কিংবা কোন দাবি বা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার কিংবা কোন ব্যক্তি কে তার সম্পত্তি ত্যাগে প্রকাশ্য বা অনুক্ত চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য করবার কিংবা কোন প্রতারণা যাতে প্রতারণা বা যাতে প্রতারণা সংঘটিত হতে পারে, তার উদ্দেশ্যে কোন মিথ্যা দলিল বা দলিলের অংশবিশেষ প্রণয়ন করে, তবে উক্ত ব্যক্তি ‍‍‍‍‍‍‍‍‍জালিয়াতি করেছে বলে গন্য হবে । ধারা : ৪৬৪- মিথ্যা দলিল প্রণয়ন উদাহরণের মাধ্যমে দলিল জালিয়াতির বিষয়টি বোঝা যাবে করিম একটি সম্পত্তি বিক্রয় করে তা জলিলকে অর্পণ করে। করিম পরে জলিলকে তার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করবার উদ্দেশ্যে সে একই সম্পত্তি বাদল এর কাছ কাছে হস্তান্তর সম্পর্কে একটি দলিল প্রণয়ন করে। তার উদ্দেশ্যে জলিল কে প্রদানের ছয় মাস আগেই সম্পত্তিটি বাদলকে প্রদান করা হয়েছে এরকম বিশ্বাস সৃস্টি করা। করিম জালিয়াতি করেছে। জালিয়াতির শাস্তি: যদি কোন ব্যক্তি জালিয়াতি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি দুই বত্‍সর পযর্ন্ত মেয়াদের যে কোন বর্ণনার কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবে। বিশ্লেষণ: বতর্মান ধারায় জালিয়াতির অপরাধে দন্ডের বিধান দেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি জালিয়াতি করে তাকে দুই বত্‍সরের কারাদন্ড বা জরিমানা দন্ড অথবা উভয়বিধ দন্ড দেওয়া যায়। কোন ব্যক্তি যদি দলিল লিখন ও সহি সম্পাদনের কাজে সম্পৃক্ত না থাকে তাকে জালিয়াতির অপরাধে দন্ড দেওয়া যায়না। বাদী পক্ষকে জালিয়াতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে হবে। ধারা: ৪৬৮ প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি: যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণা করবার উদ্দশ্যে কোন জাল দলিল প্রণয়ন বা জালিয়াতি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি সাত বত্‍সর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডিত হবে এবং অথর্দন্ডে ও দন্ডিত হবে। বিশ্লেষণ: বর্তমান ধারায় প্রতারণা করবার উদ্দেশ্যে দলির জালিয়াতির অপরাধে সাত বত্‍সরের কারাদন্ড এবং তদুপরি জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এই ধারায় বর্ণিত অপরাধটি গুরুতর ধরনের অপরাধ। কোন ব্যক্তি প্রতারণা করবার উদ্দেশ্যে যদি দলিল জাল করে তাহলে ৪৬৮ ধারায় অপরাধ সম্পন্ন হবে। বাস্তবে প্রতারণা না করলেও দন্ড দেওয়া যাবে। প্রতারণার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিপ্রায়ে জাল দলিল সৃষ্টি করবার অপরাধে দন্ডিত হবে। ক্ষেত্র বিশেষে আসামীর দন্ড পরিবর্তন হতে পারে । ধারা: ৪৭০প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধুভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রস্তুতকৃত যে কোন মিথ্যা দলিল "জাল দলিল"বলে গণ্য হবে। বিশ্লেষণ: "জাল দলিল" কথাটির সাথে জনসাধারণ সুপরিচিত। দলিল জালকরণ বলতে দন্ডবিধির ৪৬৪ ধারায় বর্ণিত মিথ্যা দলিল সৃজনকে বোঝায়। দৃষ্টত: কোন দলিলকে জাল বা তঞ্চকী বলে সাব্যস্ত করা কষ্টসাধ্য। কেননা বিশুদ্ধ দলিল এবং জাল দলিল বহুলাংশে হুবহু সামজ্ঞস্যপূর্ণ হতে পারে। ধারা: ৪৭১ যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধুভাবে এমন দলিল খাঁটি দলিল বলে ব্যবহার করে যে দলিলিট জাল দলিল বলে জানে বা তা বিশ্বাস করে বিশ্বাস করবার আছে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি এমনভাবে দন্ডিত হবে যেন সে দলিলটি জাল করেছে। বিশ্লেষণ: আলোচ্য ধারায় জাল দলিলকে বিশুদ্ধ দলিল বলে ব্যবহার করার অপরাধে দন্ডের বিধার করা হয়েছে। যে ব্যক্তি কোন দলিলকে জাল বলে জানে বা বিশ্বাস করে অথবা জাল বলে বিশ্বাস করবার যথেষ্ট কারণ থাকা সত্বেও একে খাঁটি বলে ব্যবহার করে বা ব্যবহার করার উদ্যোগ গ্রহণ করে সেই ব্যক্তি ৪৭১ ধারার বিধান অনুযায়ী দন্ডিত হবে। জালিয়াতির অপরাধে ৪৬৫ ধারায় দুই বত্‍সরের কারাদন্ড বা বিধান রয়েছে । কোথায় যেতে হবে: যখন কোন ব্যক্তির উত্তরাধিকার তার জায়গা জমির দলিল জালিয়াতির মাধ্যমে লঙ্ঘিত হয়, তখন সে ব্যক্তি সরাসরি আদালতের মাধ্যমে ফৌজদারী মামলায় যেতে পারে নিজস্ব আইনজীবি নিয়োগের মাধ্যমে। আর যদি আর্থিক ক্ষমতা না থাকে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন এন.জি.ও এর মাধ্যমে যারা বিনামূল্যে মামলা করে থাকে তাদের সাহায্য নিতে পারেন।

Monday, October 5, 2015

ভূমি ক্রয়ে ক্রেতার করণীয়


জমি-জমার মূল্য বর্তমানে অস্বাভাবিক রকম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর সুত্রে আমাদের দেশে একই জমিকে সাত আটবার বিক্রি করার ঘটনা অহরহই ঘটছে। অর্থাৎ একই জমিকে ভিন্ন ভিন্ন দলিলে কয়েকবার বিক্রি করা হচ্ছে। কোন কোন সময় ভিন্ন লোককে বিক্রেতা সাজিয়ে ভূয়া দলিল রেজিষ্ট্রারী করছে। সীমাহীন জালিয়াতির মাধ্যমে বিরামহীনভাবে চলছে দেশব্যাপী এমন জোচ্চুরী। দেশে যে রেজিষ্ট্রেশন ও ভূমি আইন প্রচলিত রয়েছে তার ফাঁক ফোকর গলেই এক শ্রেনীর ধূর্তরা এমন জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছে। এমনকি মিথ্যা ও ভূয়া দলিলের মাধ্যমে সরকারের খাস জমিকেও তারা অবলীলায় বিক্রী করে চলেছে। প্রচলিত ব্যবস্থা এমনই যে কেউ যদি জাতীয় সংসদও বিক্রী করে দেয় সাব-রেজিষ্ট্রারের তা জানারও কোন উপায় নেই। আইনের ফাঁক ফোকর ও দুর্বলতার সুযোগে টাউট বাটপাররা একদিকে যেমন ভূমির ক্রেতাকে ঠকাচ্ছে, তেমনি বিক্রেতাকেও। একদিকে জাল দলিল মারফত দায়বদ্ধ ও কন্টকাকীর্ণ জমিকে তারা নির্দায়ী ও নিষ্কন্টক বানিয়ে ফেলছে, তেমনি কতিপয় ক্ষেত্রে নির্দায়ী ও নিষ্কন্টক ভূমিকে তারা কন্টকাকীর্ণ করে তুলছে।

তাই জমি কেনার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরী। ভেজাল জমি কিনে একদিকে যেমন সারা জীবনের সঞ্চয় হারাতে হয়, তেমনি পুত্র পৌত্রাদি ওয়ারিশানক্রমে সকলকে কোর্ট কাছারি,মামলা মোকদ্দমার সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দেয়া হয় । ১৯০৮ সালের যে আইনের ভিত্তিতে আমাদের দেশে এখনো জমি কেনাবেচা চলছে সে আইনের ফাঁক ফোকরে জালিয়াতির সংখ্যাও বাড়ছে সীমাহীন গতিতে। ভূমির মালিকানা সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়া অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন ব্যাপার বটে। অজ্ঞ লোকজন মুন্সি-মোহরী ও দালালের শরণাপন্ন কিংবা খপ্পরে পড়ে ভূমি ক্রয় করতে গিয়ে নিজের সর্বনাশ করেছেন-এমন উদাহরণ ভুরিভুরি। পরিণামে তাদের আমছালা দুটোই গেছে। অনেক শিক্ষিত লোকজনকেও দেখা গেছে ভাল করে কাগজপত্র যাচাই বাছাই না করে জমি ক্রয় করে মহা বিপদে পড়েছেন। ক্রয়ের পর জমিতে বাড়ী করতে গিয়ে জানতে পারলেন ঐ জমি ব্যাংকের নিকট বন্ধকী অবস্থায় আছে। এছাড়া এমন ঘটনাও ঘটেছে, জমির কাগজপত্র সব ঠিক, মালিকানা স্বত্বও ঠিক, কিন্তু জমির পজেশন বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে অন্যটা। অর্থাৎ অন্য দাগের জমিকে সেই দাগের জমি বলে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আইনগত ফাঁক ফোকর তো আছেই। এজন্য জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর জোর দিতে হবে।


১। যার কাছ থেকে জমি কিনবেন তার থেকে ঐ জমি সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্রের ফটোকপি চেয়ে নিন। যেমন, সি.এস খতিয়ান, আর.এস খতিয়ান, এস.এ খতিয়ান, বি.এস খতিয়ানসহ আজ পর্যন্ত যত কেনাবেচা হয়েছে সেগুলোর বায়া দলিল, মিউটেশনকৃত খতিয়ান এবং হাল সালের খাজনার দাখিলাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র।

২। এরপর উল্লেখিত কাগজপত্রগুলো একজন ভাল সিভিল ল’ইয়ার (আইনজীবি) কে দিয়ে জমিটির ‘টাইটেল’ ঞরঃষব ঃবংঃ করিয়ে নিন।
বিজ্ঞ আইনজীবি যেভাবে টাইটেল টেষ্ট করবেন-তা হলো- তিনি সি.এস খতিয়ান ও এস.এ খতিয়ান পাশাপাশি মিলিয়ে দেখবেন জেলা, মৌজা, থানা দাগ নাম্বার ইত্যাদি মিলে কিনা। যদি না মেলে তাহলে জানতে হবে কেন মিললো না। যেখানে সি.এস ভেঙ্গে এস.এ দাগ হয়েছে সেখানে না মিলবারই কথা । অতএব ঐ মৌজার সি.এস সীট এবং এস.এ সীট জোগাড় করে এরপর সি.এস সীটের উপর এস.এ সীট বসিয়ে দেখতে হবে সি.এস দাগ ভেঙ্গে কয়টি দাগ হয়েছে এবং সেগুলো কি কি। এরপর ভূমি রেকর্ডরুম থেকে ঐ খতিয়ান গুলোর সইমুহুরী নিয়ে মালিক বা রায়তের নাম কনফার্ম হতে হবে। যদি সি.এস খতিয়ানের দখলকারের নামের সহিত এস.এ খতিয়ানের রায়তের নাম না মিললে দেখতে হবে সি.এস এর মালিক জমিটি কি করলেন। তিনি যদি বিক্রী, দান, হেবা ,এওয়াজ বা কোনরুপ হস্তান্তর করে থাকেন, তাহলে সাব রেজিষ্ট্রারী অফিসে গিয়ে তল্লাশী দিতে হবে এবং হস্তান্তর দলিলের সইমুহুরী নকল বের করতে হবে। আর যদি সি.এস খতিয়ানের মালিক জমিটি হস্তান্তর না করে থাকেন, তাহলে তার বংশ তালিকা নিয়ে ফরায়েজ অনুযায়ী দেখতে হবে বিক্রেতার অংশ/হিস্যা কতটুকু। তিনি ফরায়েজ অনুযায়ী যতটুকু জমির প্রাপক, ততটুকু কেনাই নিরাপদ হবে।

৩। বিক্রেতার জমিটি তার অন্যান্য শরীকদারের সঙ্গে অংশনামা হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে। বিক্রেতা যদি বলেন যে, আপোষমুলে বন্টন হয়েছে, কিন্তু তা রেজিষ্ট্রী হয়নি। তাহলে ফরায়েজ অনুযায়ী বিক্রেতা যেটুকু হিস্যার দাবীদার তার চাইতে একচুল বেশী কেনাও নিরাপদ হবে না।

৪। ফরায়েজ ও হিস্যা বন্টন খুব সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে।

৫। নামজারী বা সর্বশেষ খতিয়ান পর্যালোচনা করতে হবে। বিক্রেতার নামে সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে ঐ সম্পত্তি খরিদ করা যাবে না। উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে পূর্ববর্তীর নাম খতিয়ানে লিপি থাকলে সম্পত্তি খরিদ করা যায়। তবে এখানে ওয়ারিশ সম্পর্কে সবিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

৬। দাতা যদি খরিদ সুত্রে মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে বায়া দলিল সমুহ পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। যতবার সম্পত্তিটি ক্রয় বিক্রয় হয়েছে, তার প্রতিটি দলিল নিরীক্ষা করতে হবে।

৭। বায়া দলিলের সাথে মৌজা, খতিয়ান, দাগ নাম্বার ও জমির পরিমাণ মিলিয়ে দেখতে হবে। বায়া দলিলের ধারাবাহিকতা ও খতিয়ানের ধারাবাহিকতা মিলিয়ে দেখতে হবে।

৮। বিক্রেতার নিকট জমির দখলটি নিরংকুশ ভাবে আছে কিনা সেটা ভালভাবে যাচাই করে দেখতে হবে।

৯। জমি বিক্রেতার মালিকানা স্বত্ব তথা বিক্রয়ের বৈধ অধিকার আছে কিনা তা দেখতে হবে। অর্থাৎ জমির মালিক নাবালক কিংবা অপ্রকৃতস্থ কিনা লক্ষ্য রাখতে হবে। নাবালক হলে আদালতের মাধ্যমে গার্ডিয়ান নিযুক্ত করে বিক্রয়ের অনুমতি নিতে হবে।

১০। অংশীদার ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে জমি নিলে আইনের বিধান মতে সকল অংশীদারকে নোটিশ দিতে হবে। অন্যথায়, পরবর্তীতে প্রিয়েমশান বা অগ্রক্রয়ের মামলা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।

১১। বিক্রেতা যদি তার ক্রয়কৃত জমি বিক্রি করতে চান, তাহলে রেকর্ডীয় মালিক থেকে পরবর্তীতে হস্তান্তরিত সকল বায়া দলিল সমুহে বর্ণিত স্বত্ব ঠিক ছিল কিনা তা দেখতে হবে। ঐ দলিলে বর্ণিত খতিয়ান ও দাগ নাম্বার অনুযায়ী খতিয়ানাদি বের করে তা-ও বিশ্লেষন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট রেজিষ্ট্রারী অফিস ও ভূমি অফিস /খতিয়ান অফিস/ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (রাজস্ব) অফিস সইমুহরী নিয়ে তা যাচাই করতে হবে।

১২। আরও খতিয়ে দেখতে হবে জমিটি খাস, পরিত্যাক্ত কিম্বা শত্রু সম্পত্তি কিনা। অথবা সরকার কোন কারনে সম্পত্তিটি অধিগ্রহন করেছে কিনা।

১৩। ষ্টেট একুইজিশন এন্ড টেন্যান্সী এ্যাক্টের ৯৭ ধারা অনুযায়ী কোন আদিবাসীর ভূমি অনুরূপ আদিবাসী ব্যতিত অন্য কেহ ক্রয় করতে চাইলে বা অন্যের নিকট হস্তান্তর করতে চাইরে দলিল রেজিষ্ট্রী করার পূর্বে রেভিনিউ অফিসারের লিখিত সম্মতি নিতে হয় যাহা দলিলে উল্লেখ করতে হয়। এই বিধান লংঘন করলে ভূমি ক্রয় বা হস্তান্তর বাতিল হয়ে যায়।

১৪। প্রেসিডেন্ট আদেশ নং ৯৮/৭২ অনুযায়ী, ১৩-৪-৮৪ তারিখ পর্যন্ত কোন পরিবার ১০০ বিঘার অতিরিক্ত ভূমি এবং (অধ্যাদেশ ১০/৮৪) ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৪ ধারা অনুযায়ী যে সকল মালিক বা পরিবারের ৬০ বিঘার নিম্নে অথবা ৬০ বিঘা পর্যন্ত ভূমি ছিল তারা উক্ত অধ্যাদেশ জারীর তারিখ হতে (অধ্যাদেশ ১০/৮৪) ক্রয় বা অন্যবিধ উপায়ে অর্জন করতে পারবেন না।


১৫। রেজিষ্টি অফিস থেকে Non-Encumbrance Certificate (N.E.C) নিতে হবে। এতে ঐ জমির সর্বশেষ মালিকের নাম থাকবে। বিক্রেতাই যদি ঐ মালিক হন, তাহলে ঠিক আছে।

১৬। এরপর দেখতে হবে বিক্রেতা ঐ জমির ব্যাপারে কাউকে Power of attorney দিয়েছেন কিনা। এছাড়া ব্যাংক কিম্বা অন্য কোন প্রতিষ্টানে মর্টগেজ দিয়েছেন কিনা -এটাও রেজিষ্ট্রি অফিসে তল্লাশী দিয়ে জানতে হবে।

১৭। জমিটি টাইটেল টেষ্ট OK হওয়ার পরও কিন্তু কাজ থেকে যায়। এবার বি.এস সীট/ আর.এস সীট নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখতে হবে সীট অনুযায়ী ঐ জমিটিই সেই দাগের জমি কিনা। নাকি দালালেরা অন্য দাগের জমি ক্রেতাকে দখল দিতে যাচ্ছেন।

১৮। বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমিটি বর্তমানে দখলে কে আছে, ক্রয় করলে কোন কারনে ভোগ দখলে বাধাগ্রস্থ হবে কিনা কিম্বা রাস্তা বা পথাধিকারে কোন বাধা নিষেধ আছে কিনা তা-ও সরেজমিনে যাচাই করে নিতে হবে।

সবকিছু ঠিকঠাক পাওয়ার পরও খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে ঐ জমি নিয়ে কোন মামলা মোকদ্দমা আছে কিনা। সম্ভব হলে পত্রিকায় লিগ্যাল নোটিশও দেয়া যেতে পারে। লিগ্যাল নোটিশের কয়েকটি ফটোকপি ঐ এলাকার দর্শনীয় স্থানে টাঙ্গিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু এ কথা মনে রাখতে হবে যে, লিগ্যাল নোটিশের কোন লিগ্যাল ভেল্যু নেই। কেননা যে কেউ আদালতে এই যুক্তি দেখাতে পারে যে, সে ঐ পত্রিকা পড়ে না কিংবা পড়লেও ঐ দিনেরটা পড়েনি, কিংবা ঐ দিনেরটা পড়লেও লিগ্যাল নোটিশ পড়েনি।

দলিল রেজিষ্ট্রি করার আগে সবকিছু ঠিকঠাক পাওয়া গেলে এরপর দলিল প্রস্তুত করতে হবে। দলিল লেখার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত আবশ্যক। মুন্সি মুহুরী দিয়ে দলিল না লিখিয়ে একজন ভাল ল’ইয়ার (আইনজীবী) এর শরনাপন্ন হওয়া উচিৎ। কেননা ভুমি সংক্রান্ত আইনগত দিকগুলো তিনিই ভাল বুঝবেন। ভূমি আইন, হেবা আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ও রেজিষ্ট্রেশন আইন সম্পর্কে অজ্ঞ কোন লোক দিয়ে দলিল লেখানো ঠিক নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, কোন কোন আইনজীবীকেও দেখা যায়, তিনি তার নিয়োজিত মুন্সি বা জুনিয়র দিয়ে দলিল লিখিয়ে তা রেজিষ্ট্রী করতে পাঠান। মক্কেলের দলিলকে এত হালকাভাবে নেয়া আদৌ উচিত নয়। দলিল লেখা ও রেজিষ্ট্রীর বিষয়কে কেবল মুন্সি মুহুরীর কাজ বিবেচনা করার কোন হেতু নেই। কেননা এতে মক্কেলের সারা জীবনের সঞ্চয় জড়িত। আর মক্কেলেরও উচিত বিষয়টির দিকে যথাযথ নজর দেয়া।



নামজারি কেন জরুরি?


নামজারি কেন জরুরি- সে প্রশ্নের উত্তর জানার আগে সম্ভবত নামজারি’ বলতে আমরা কী বুঝি তা খানিকটা জানা প্রয়োজন। 
               এক কথায় নামজারি’ বলতে-কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বৈধ পন্থায় ভূমি/জমির মালিকানা অর্জন করলে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে তার নামে রেকর্ড আপটুডেট (হালনাগাদ) করাকেই নামজারি বলা হয়। কোন ব্যক্তির নামজারি সম্পন্ন হলে তাকে একটি খতিয়ান দেয়া হয় যেখানে তার অর্জিত জমির একখানি সংক্ষিপ্ত হিসাব বিবরণী উল্লেখ থাকে। উক্ত হিসাব বিবরণী অর্থাৎ খতিয়ানে মালিকের নাম,কোন্ মৌজামৌজার নম্বর (জে এল নম্বর)জরিপের দাগ নম্বরদাগে জমির পরিমান,একাধিক মালিক হলে তাদের নির্ধারিত হিস্যা ও প্রতি বছরের ধার্যকৃত খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে। 


এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। কেন নামজারি এত জরুরি তার মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি গুরুত্বপূর্ণঃ
  • শুধুমাত্র কোন দলিলের মাধ্যমে অর্জিত মালিকানার ভিত্তিতে অথবা ওয়ারিশ হিসেবে পিতা-মাতার জমিতে দখলসূত্রে থাকলেই সরকারি রেকর্ডে উক্ত ভূমিতে তাঁর মালিকানা নিশ্চিত হয় না। কোন ভূমিতে বৈধ ওয়ারিশ বা ক্রয়সূত্রে মালিক হবার পর পূর্বের মালিকের নাম হতে নাম কেটে বর্তমান মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়তাহলেই তার মালিকানা সরকার কর্তৃক নিশ্চিত হয়। আর এটিই হল নামজারি পদ্ধতি।
  • আপনি যদি ওয়ারিশ হিসাবে বা ক্রয়সূত্রে কোন জমির মালিক হন কিন্তু নামজারি না করানতবে আপনার অজান্তে কোনভাবে এক/একাধিক দলিল সম্পাদন করে কোন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি আপনার আগে নামজারি করে ফেলতে পারে। তাতে আপনি পরবর্তীতে নামজারি করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায় পড়বেন। বাস্তবক্ষেত্রে জটিলতা আরো বাড়তে দেখা গেছে যখন উক্ত স্বার্থানেষী ব্যক্তি অপর এক বা একাধিক ব্যক্তির নিকট ঐ জমি ইতোমধ্যে বিক্রয় করে ফেলেছে। বর্তমানে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে নানারকম মামলা মোকদ্দমার সৃষ্টি হয়ে থাকে যা দীর্ঘদিন যাবৎ অর্থসময় ও মানুষে-মানুষে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।
  • সাধারণভাবে আমাদের ধারণাদলিল সম্পাদন হলেই কাজ শেষ। নামজারির দরকার কীএটি অত্যন্ত ভুল ধারণা। দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে শুধুমাত্র মালিকানা হস্তান্তর হয়সরকারের খাতায় মালিক হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় না।
  • রেজিস্ট্রেশন দপ্তরটি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি অফিস। সকল প্রকার দলিল সম্পাদনরেজিস্ট্রিকরণ উক্ত দপ্তরের কাজ। দলিল রেজিস্ট্রিকরণের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত যিনি বিক্রেতা তিনি আদৌ উক্ত জমির মালিক হিসাবে সরকারের রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত আছেন কী না তার কোন রেকর্ড জেলা রেজিস্টার বা সাব-রেজিস্টারের দপ্তরে নেই। ফলে ভুলবশত: একই জমির এক বা একাধিক দলিলের মাধ্যমে বিক্রয়ের ঘটনা ঘটে। অপরদিকে ভূমি অফিসগুলি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন যার কাছে সরকারের কাছে রেকর্ডভুক্ত মালিকদের নামপূর্ববর্তী নামজারিকৃত মালিকদের নামনথিসহ বিস্তর তথ্য থাকে। ফলে একবার নামজারি করাতে সক্ষম হলে একই জমির একাধিকবার বিক্রয় হলেও মূল মালিকের আর ক্ষতিগ্রস্ত বা হয়রানী হবার সম্ভাবনা কম থাকে।
  • নামজারি আবেদনের মাধ্যমে আবেদনকারি যে স্বত্বলিপি অর্জন করেনযাকে প্রচলিত ভাষায় আমরা খতিয়ান’ বলে থাকিএর মাধ্যমে তার উক্ত জমিতে মালিকানা স্বত্ব প্রমাণে নিশ্চয়তা লাভ করেন যা অন্য কোন দালিলিক মাধ্যমে লাভ করেন না।
  • নামজারি করা না থাকলে শুধু একাধিক বিক্রয়ের আশঙ্কাই বিদ্যামান থাকেনা,পরবর্তীতে আপনার অর্জিত সম্পত্তিতে দখলে থাকলেও পরবর্তীতে আপনার অবর্তমানে আপনার উত্তরাধিকারগণ উক্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবার আশঙ্কা থাকে।
  • যে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ঋণ নিতে গেলে জমি বন্ধকের ক্ষেত্রে খতিয়ান ছাড়া আবেদন গ্রহণ করা হয় না।
  • ওয়ারিশনমূলে প্রাপ্ত জমির মালিকরা যদি নামজারি না করান তাহলে তাদের মধ্যে বিশেষত: নারী অংশীদারগণ এবং ভবিষ্যতে তাদের ওয়ারিশগণদের মধ্যে মারাত্নক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ জন্য ওয়ারিশগণ সমঝোতার মাধ্যমে প্রথমেই নামজারি সম্পন্ন করে রাখলে পরবর্তীতে অনেক জটিলতা পরিহার করা সম্ভব হয়।
পরিশেষেউপরোক্ত বিষয়গুলির আলোকে জমির মালিকগণকে অনুরোধ করা যাচ্ছে-যাঁরা এখনও গড়িমসি করে নামজারি সম্পন্ন করেননি তারা অনতিবিলম্বে নামজারির জন্য আবেদন জানান। মনে রাখবেনএটি একটি সহজ প্রক্রিয়াএতে ভয়ের কিছু নেই,যদি আপনি এখানে উদ্ধৃত নিয়মগুলি একটি পড়ে নেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন তাহলে আপনার-জমি সংশ্লিষ্ট বড় ধরণের আপত্তি কিংবা মামলা-মোকদ্দমা না থাকে তবে নির্ধারিত ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে আপনাকে নামজারির খতিয়ান সৃজন করে দেয়া সম্ভব।

“পর্চা”, “দাগ”, “খতিয়ান”, “মৌজা”, “জমা খারিজ”, “নামজারি”, “তফসিল” কাকে বলে?

“পর্চা”, “দাগ”, “খতিয়ান”, “মৌজা”, “জমা খারিজ”, “নামজারি”, “তফসিল” কাকে বলে

দুরন্ত ফিচার ঃ “পর্চা”, “দাগ”, “খতিয়ান”, “মৌজা”, “জমা খারিজ”, “নামজারি”, “তফসিল” কাকে??? এবং জেনে নিন ভূমি বিষয়ক জরুরী সব তথ্য..
“নামজারী” কাকে বলে?
ক্রয়সূত্রে/উত্তরাধিকার সূত্রে অথবা যেকোন সূত্রে জমির নতুন মালিক হলে নতুন মালিকের নাম সরকারি খতিয়ানভুক্ত করার প্রক্রিয়াকে নামজারী বলা হয়।
“জমা খারিজ”কাকে বলে?
যৌথ জমা বিভক্ত করে আলাদা করে নতুন খতিয়ান সৃষ্টি করাকে জমা খারিজ বলে। অন্য কথায় মূল খতিয়ান থেকে কিছু জমির অংশ নিয়ে নতুন জোত বা খতিয়ান সৃষ্টি করাকে জমা খারিজ বলে।
“খতিয়ান” কাকে বলে?
ভূমি জরিপকালে ভূমি মালিকের মালিকানা নিয়ে যে বিবরণ প্রস্তুত করা হয় তাকে “থতিয়ান” বলে। খতিয়ান প্রস্তত করা হয় মৌজা ভিত্তিক। আমাদের দেশে CS, RS, SA এবং সিটি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এসব জরিপকালে ভূমি মালিকের তথ্য প্রস্তত করা হয়েছে তাকে “খতিয়ান” বলে। যেমন CS খতিয়ান, RS খতিয়ান…
ভূমি জরিপ: CS, RS, PS, BS কি?
ভূমি বা Land কাকে বলে?
“ভূমি কাকে বলে?”- এর আইনী সংজ্ঞা রয়েছে। The State Acquisition and Tenancy Act, 1950- এর ২(১৬)- ধারা মতে, “ভূমি (land) বলতে আবাদি, অনাবাদি অথবা বছরের যেকোন সময় পানিতে ভরা থাকে এবং ভূমি হতে প্রাপ্ত সুফল, ঘরবাড়ি বা দালান কোঠা বা মাটির সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য দ্রব্য অথবা স্হায়ীভাবে সংযুক্ত দ্রব্য এর অন্তর্ভুক্ত বুঝাবে।” ভূমি জরিপ/রেকর্ড কাকে বলে? ভূমি জরিপ হচ্ছে ভূমির মালিকানা সম্বলিত ইতিহাসের সরেজমিন ইতিবৃত্ত।
আইনী সংজ্ঞা হচ্ছে, The Survey Act, 1875 এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুযায়ী সরকারের জরিপ বিভাগ সরেজমিন জরিপ করে ভূমির মালিকানার যে বিবরণ
এবং নকশা তৈরী করে তাই রেকর্ড বা জরিপ। অর্থাৎ রেকর্ড বা জরিপ হচ্ছে মালিকানার বিরবণ এবং নকশার সমন্বয়। একটি ভূমির মালিক কে এবং তার সীমানা কতটুকু এটা ভূমি জরিপের মাধ্যমে নকশা/ম্যাপ নির্ণয় করা হয়। এই নকশা এবং ম্যাপ অনুসারে মালিকানা সম্পর্কিত তখ্য যেমন ভূমিটি কোন মৌজায় অবস্থিত, এর খতিয়ান নাম্বার, ভূমির দাগ নাম্বার, মালিক ও দখলদারের বিবরণ ইত্যাদি প্রকাশিত হয় যাকে খতিয়ান বলে। রেকর্ড বা জরিপ
প্রচলিতভাবে খতিয়ান বা স্বত্ত্বলিপি বা Record of Rights (RoR) নামেও পরিচিত। রেকর্ড বা জরিপের ভিত্তিতে ভূমি মালিকানা সম্বলিত বিবরণ খতিয়ান
হিসেবে পরিচিত, যেমন CS খতিয়ান, RS খতিয়ান, ইত্যাদি। আমাদের দেশে পরিচালিত ভূমি জরিপ বা রেকর্ড গুলো হচ্ছে;
1. CS -Cadastral Survey
2. SA- (1956)
3. RS -Revitionel Survey
4. PS – Pakistan Survey
5. BS- Bangladesh Survey (1990)
ক) সি.এস. জরিপ/রেকর্ড (Cadastral Survey)
“সিএস” হলো Cadastral Survey (CS) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। একে ভারত উপমহাদেশের প্রথম জরিপ বলা হয় যা ১৮৮৯ সাল হতে ১৯৪০ সালের মধ্যে পরিচালিত হয়। এই জরিপে বঙ্গীয় প্রজাতন্ত্র আইনের দশম অধ্যায়ের বিধান মতে দেশের সমস্ত জমির বিস্তারিত নকশা প্রস্তুত করার এবং প্রত্যেক মালিকের জন্য দাগ নম্বর উল্লেখপুর্বক খতিয়ান প্রস্তুত করার বিধান করা হয়। প্রথম জরিপ হলেও এই জরিপ প্রায় নির্ভূল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। মামলার বা ভূমির জটিলতা নিরসনের ক্ষেত্রে এই জরিপকে বেস হিসেবে অনেক সময় গণ্য করা হয়।
খ) এস.এ. জরিপ (State Acquisition Survey)
১৯৫০ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর সরকার ১৯৫৬ সালে সমগ্র পূর্ববঙ্গ প্রদেশে জমিদারী অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয় এরং রায়েতের সাথে সরকারের সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে জমিদারদের প্রদেয় ক্ষতিপুরণ নির্ধারন এবং রায়তের খাজনা নির্ধারনের জন্য এই জরিপ ছিল।
জরুরী তাগিদে জমিদারগন হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই জরিপ বা খাতিয়ান প্রণয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল।
গ) আর.এস. জরিপ ( Revisional Survey)
সি. এস. জরিপ সম্পন্ন হওয়ার সুদীর্ঘ ৫০ বছর পর এই জরিপ পরিচালিত হয়। জমি, মলিক এবং দখলদার ইত্যাদি হালনাগাদ করার নিমিত্তে এ জরিপ সম্পন্ন করা হয়। পূর্বেও ভুল ত্রুটি সংশোধনক্রমে আ. এস জরিপ এতই শুদ্ধ হয় যে এখনো জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে আর, এস জরিপের উপর নির্ভর করা হয়। এর খতিয়ান ও ম্যাপের উপর মানুষ এখনো অবিচল আস্থা পোষন করে।
ঘ) সিটি জরিপ (City Survey)
সিটি জরিপ এর আর এক নাম ঢাকা মহানগর জরিপ। আর.এস. জরিপ এর পর বাংলাদেশ সরকার কর্তিক অনুমতি ক্রমে এ জরিপ ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়। এ যবত কালে সর্বশেষ ও আধুনিক জরিপ এটি। এ জরিপের পরচা কম্পিউটার প্রিন্ট এ পকাশিত হয়।
“পর্চা” কাকে বলে?
ভূমি জরিপকালে চূড়ান্ত খতিয়ান প্রস্তত করার পূর্বে ভূমি মালিকদের নিকট খসড়া খতিয়ানের যে অনুলিপি ভুমি মালিকদের প্রদান করা করা হ তাকে “মাঠ পর্চা” বলে। এই মাঠ পর্চা রেভিনিউ/রাজস্ব অফিসার কর্তৃক তসদিব বা সত্যায়ন হওয়ার পর যদি কারো কোন আপত্তি থাকে তাহলে তা শোনানির পর খতিয়ান চুড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হয়। আর চুড়ান্ত খতিয়ানের অনুলিপিকে “পর্চা” বলে।
“মৌজা” কাকে বলে?
যখন CS জরিপ করা হয় তখন থানা ভিত্তিক এক বা একাধিক গ্রাম, ইউনিয়ন, পাড়া, মহল্লা অালাদা করে বিভিন্ন এককে ভাগ করে ক্রমিক নাম্বার দিয়ে চিহ্তি করা হয়েছে। আর বিভক্তকৃত এই প্রত্যেকটি একককে মৌজা বলে।
“তফসিল” কাকে বলে?
জমির পরিচয় বহন করে এমন বিস্তারিত বিবরণকে “তফসিল” বলে। তফসিলে, মৌজার নাম, নাম্বার, খতিয়ার নাম্বার, দাগ নাম্বার, জমির চৌহদ্দি, জমির পরিমাণ সহ ইত্যাদি তথ্য সন্নিবেশ থাকে।
“দাগ” নাম্বার কাকে বলে? যখন জরিপ ম্যাপ প্রস্তুত করা হয় তখন মৌজা নক্সায় ভূমির সীমানা চিহ্নিত বা সনাক্ত
করার লক্ষ্যে প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে আলাদা আলাদ নাম্বার দেয়া হয়। আর এই নাম্বারকে দাগ নাম্বার বলে। একেক দাগ নাম্বারে বিভিন্ন পরিমাণ ভূমি থাকতে পারে। মূলত, দাগ নাম্বার অনুসারে একটি মৌজার অধীনে ভূমি মালিকের সীমানা খূটিঁ বা আইল দিয়ে সরেজমিন প্রর্দশন করা হয়।
“ছুটা দাগ” কাকে বলে?
ভূমি জরিপকালে প্রাথমিক অবস্থায় নকশা প্রস্তুত অথবা সংশোধনের সময় নকশার প্রতিটি ভূমি এককে যে নাম্বার দেওয়া হয় সে সময় যদি কোন নাম্বার ভুলে বাদ পড়ে তাবে ছুটা দাগ বলে। আবার প্রাথমিক পর্যায়ে যদি দুটি দাগ একত্রিত করে নকশা পুন: সংশোধন করা হয় তখন যে দাগ নাম্বার বাদ যায় তাকেও ছুটা দাগ বলে।
“খানাপুরি” কাকে বলে? জরিপের সময় মৌজা নক্সা প্রস্তুত করার পর খতিয়ান প্রস্তুতকালে খতিয়ান ফর্মের প্রত্যেকটি কলাম জরিপ কর্মচারী কর্তৃক পূরন করার প্রক্রিয়াকে খানাপুরি বলে।
“আমিন” কাকে বলে?
ভূমি জরিপের মাধ্যমে নক্সা ও খতিয়ান প্রস্তত ও ভূমি জরিপ কাজে নিজুক্ত কর্মচারীকে আমিন বলে।
“কিস্তোয়ার” কাকে বলে?
ভূমি জরিপ কালে চতুর্ভুজ ও মোরব্বা প্রস্তত করার পর সিকমি লাইনে চেইন চালিয়ে সঠিকভাবে খন্ড খন্ড ভুমির বাস্তব ভৌগলিক চিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে নকশা প্রস্তুতের পদ্ধতিকে কিস্তোয়ার বলে।
“খাজনা” ককে বলে? সরকার বার্ষিক ভিত্তিতে যে প্রজার নিকট থেকে ভূমি ব্যবহারের জন্য যে কর আদায় করে তাকে খাজনা বলে।
“দাখিলা” কাকে বলে?
ভূমি কর/খাজনা আদায় করে যে নির্দিষ্ট ফর্মে ( ফর্ম নং১০৭৭) ভূমি কর/খাজনা আদায়ের প্রমান পত্র বা রশিদ দেওয়া হয় তাকে দাখিলা বলা হয়।
DCR কাকে বলে?
ভূমি কর ব্যতিত আন্যান্য সরকারি পাওনা আদায় করার পর যে নির্ধারিত ফর্মে (ফর্ম নং ২২২) রশিদ দেওয়া হয় তাকে DCR বলে।
“কবুলিয়ত” কাকে বলে?
সরকার কর্তৃক কৃষককে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রস্তাব প্রজা কর্তৃক গ্রহণ করে খাজনা প্রদানের যে অঙ্গিকার পত্র দেওয়া হয় তাকে কবুলিয়ত বলে।
“নাল জমি” কাকে বলে?
২/৩ ফসলি সমতল ভূমিকে নাল জমি বলা হয়।
“খাস জমি” কাকে বলে?
সরকারের ভূমি মন্ত্রনালয়ের আওতাধিন যে জমি সরকারের পক্ষে কালেক্টর বা ডিসি তত্ত্বাবধান করেন এমন জমিকে খাস জমি বলে।
“চান্দিনা ভিটি” কাকে বলে?
হাট বাজারের স্থায়ী বা অস্থায়ী অকৃষি জমির যে অংশ প্রজার প্রতি বরাদ্ধদ দেওয়া হয় তাকে চান্দিনা ভিটি বলে।
“ওয়াকফ” কাকে বলে?
ইসলামি বিধান অনুযায়ী কোন ভূমি তার মালিক কর্তৃক ধর্মীয় ও সমাজ কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় ভার বহন করার উদ্দেশ্যে কোন দান করাকে ওয়াকফ বলে
“মোতয়াল্লী” কাকে বলে?
যিনি ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান করেন তাকে মোতওয়াল্লী বলে। ওয়াকফ প্রশাসকের অনুমতি ব্যতিত মোতওয়াল্লী ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর
করতে পারে না।
“দেবোত্তর” সম্পত্তি কাকে বলে?
হিন্দুধর্ম মতে, ধর্মীয় কাজের জন্য উৎসর্গকৃত ভূমিকে দেবোত্তর সম্পত্তি বলে।
“ফারায়েজ” কাকে বলে?
ইসলামি বিধান মোতাবেক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টন করার নিয়ম ও প্রক্রিয়াকে ফারায়েজ বলে।
“ওয়ারিশ” কাকে বলে?
ওয়ারিশ অর্থ উত্তরাধিকারী । ধর্মীয় বিধানের অনুয়ায়ী কোন ব্যক্তি উইল না করে মৃত্যু বরন করলেতার স্ত্রী, সন্তান বা নিকট আত্মীয়দের মধ্যে যারা তার
রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে মালিক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে ওয়ারিশ বলে।
“সিকস্তি” কাকে বলে?
নদী ভাংঙ্গনের ফলে যে জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায় তাকে সিকন্তি বলে। সিকন্তি জমি যদি ৩০ বছরের মধ্যে স্বস্থানে পয়ন্তি হয় তাহলে সিকন্তি হওয়ার
প্রাক্কালে যিনি ভূমি মালিক ছিলেন তিনি বা তাহার উত্তরাধিকারগন উক্ত জমির মালিকানা শর্ত সাপেক্ষ্যে প্রাপ্য হবেন।
“পয়ন্তি” কাকে বলে?
নদী গর্ভ থেকে পলি মাটির চর পড়ে জমির সৃষ্টি হওয়াকে পয়ন্তি বলে।
“দলিল” কাকে বলে?
যে কোন লিখিত বিবরণ আইনগত সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য তাকে দলিল বলা হয়। তবে রেজিস্ট্রেশন আইনের বিধান মোতাবেক জমি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য যে চুক্তিপত্র সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করেন সাধারন ভাবেতাকে দলিল বলে।

খতিয়ান কি/ সি এস খতিয়ান/ এস এ খতিয়ান/ আর এস খতিয়ান/ বি এস খতিয়ান/ পর্চা কি/

আপনার জমি নির্ভেজাল রাখতে জেনে রাখুন । নেট থেকে বিভিন্ন সাইট ভিজিট করে নিন্মের আলোচনা তথ্য গুলো সংগ্রহ করে পোষ্ট করেছি। পরিশ্রম সফল হবে যদি আপনাদের কাজে লাগে। 

খতিয়ান কি :  মৌজা ভিত্তিক এক বা একাদিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্ত্তত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। এতে ভূমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নামজমির দাগ নংপরিমাণপ্রকৃতিখাজনার হার ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের খতিয়ানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তন্মধ্যে সিএসএসএ এবং আরএস উল্লেখযোগ্য

সি এস খতিয়ান : ১৯১০-২০ সনের মধ্যে সরকারি আমিনগণ প্রতিটি ভূমিখণ্ড  পরিমাপ করে উহার আয়তনঅবস্থান ও ব্যবহারের প্রকৃতি নির্দেশক মৌজা নকশা এবং প্রতিটি ভূমিখন্ডের মালিক দখলকারের বিররণ সংবলিত যে খতিয়ান তৈরি করেন  সিএস খতিয়ান নামে পরিচিত

এস এ খতিয়ান : ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাসের পর সরকার জমিদারি অধিগ্রহণ করেনপর সরকারি জরিপ কর্মচারীরা সরেজমিনে মাঠে না গিয়ে সিএস খতিয়ান সংশোধন করে যে খতিয়ান প্রস্তুত করেন তা এসএ খতিয়ান নামে পরিচিত। কোনো অঞ্চলে এ খতিয়ান আর এস খতিয়ান নামেও পরিচিত বাংলা ১৩৬২ সালে এই খতিয়ান প্রস্তুত হয় বলে বেশির ভাগ মানুষের কাছে এসএ খতিয়ান ৬২র খতিয়ান নামেও পরিচিত
আর এস খতিয়ান : একবার জরিপ হওয়ার পর তাতে উল্লেখিত ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য পরবর্তীতে যে জরিপ করা হয় তা আরএস খতিয়ান নামে পরিচিত। দেখা যায় যেএসএ জরিপের আলোকে প্রস্তুতকৃত খতিয়ান প্রস্তুতের সময় জরিপ কর্মচারীরা সরেজমিনে তদন্ত করেনি। তাতে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়ে গেছে। ওই ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিনে ভূমি মাপ-ঝোঁক করে পুনরায় খতিয়ান প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই খতিয়ান আরএস খতিয়ান নামে পরিচিত সারাদেশে এখন পর্যন্ত তা সমাপ্ত না হলেও অনেক জেলাতেই আরএস খতিয়ানচূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি আমিনরা মাঠে গিয়ে সরেজমিনে জমি মাপামাপি করে এই খতিয়ান প্রস্তুত করেন বলে তাতে ভুলত্রুটি কম লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় এই খতিয়ান বি এস খতিয়ান নামেও পরিচিত


বি এস খতিয়ানঃ সর্ব  শেষ এই জরিপ ১৯৯০ সা পরিচালিত হয়। ঢাকা অঞ্চলে মহানগর জরিপ হিসাবেও পরিচিত।


দাগ : দাগ শব্দের অর্থ ভূমিখ-। ভূমির ভাগ বা অংশ বা পরিমাপ করা হয়েছে এবং যে সময়ে পরিমাপ করা হয়েছিল সেই সময়ে ক্রম অনুসারে প্রদত্ত ওই পরিমাপ সম্পর্কিত নম্বর বা চিহ্ন। সরেজমিনে জরিপ করার পর আমিন বা জমি পরিমাপকারী সর্ব প্রথম গ্রামের চতুঃসীমা নির্ধারণ করেন এবং গ্রামের প্রতিটি ভূমিখ- পরিমাপ করে তার অবস্থান ওই গ্রামের প্রস্তুয়মান নকশায় প্রদর্শন করার জন্য সংখ্যায়িত করেন। এভাবে নকশায় প্রদর্শিত প্রতিটি ভূমিখন্ডের সংখ্যাকে দাগ নম্বর বলে। দাগকে কোথাও কিত্তা বলা হয়
পর্চা কীঃ ভূমি জরিপকালে প্রস্তুতকৃত খসরা খতিয়ান যে অনুলিপি তসদিক বা সত্যায়নের পূর্বে ভূমি মালিকেরনিকট বিলি করা হয় তাকে মাঠ পর্চা বলে। রাজস্ব অফিসার কর্তৃক পর্চা সত্যায়িত বা তসদিক হওয়ার পর আপত্তি এবং আপিল শোনানির শেষে খতিয়ান চুরান্তভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর ইহার অনুলিপিকে পর্চা বলা হয়।
চিটা : একটি ক্ষুদ্র ভূমির পরিমাণরকম ইত্যাদির পূর্ণ বিবরণ চিটা নামে পরিচিত। বাটোয়ারা মামলায় প্রাথমিক ডিক্রি দেয়ার পর তাকে ফাইনাল ডিক্রিতে পরিণত করার আগে অ্যাডভোকেট কমিশনার সরেজমিন জমি পরিমাপ করে প্রাথমিক ডিক্রি মতে সম্পত্তি এমনি করে পক্ষদের বুঝায়ে দেন। ওই সময় তিনি যে খসড়া ম্যাপ প্রস্তুত করেন তা চিটা বা চিটাদাগ নামে পরিচিত
দখলনামা : দখল হস্তান্তরের সনদপত্র। সার্টিফিকেট জারীর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি কোনো সম্পত্তি নিলাম খরিদ করে নিলে সরকার পক্ষ সম্পত্তির ক্রেতাকে দখল বুঝিয়ে দেয়ার পর যে সনদপত্র প্রদান করেন তাকে দখলনামা বলে। সরকারের লোকসরেজমিনে গিয়ে ঢোল পিটিয়েলাল নিশান উড়ায়ে বা বাঁশ গেড়ে দখল প্রদান করেন কোনো ডিক্রিজারির ক্ষেত্রে কোনো সম্পত্তি নিলাম বিক্রয় হলে আদালত ওই সম্পত্তির ক্রেতাকে দখল বুঝিয়ে দিয়ে যে সার্টিফিকেট প্রদান করেন তাকেওদখলনামা বলা হয় যিনি সরকার অথবা আদালতের নিকট থেকে কোনো সম্পত্তির দখলনামা প্রাপ্ত হনধরে নিতে হবে যেদখলনামা প্রাপ্ত ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে দখল আছে বয়নামা : ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধির ২১ আদেশের ৯৪ নিয়ম অনুসারে কোনো স্থাবর সম্পত্তির নিলাম বিক্রয় চূড়ান্ত হলে আদালত নিলাম ক্রেতাকে নিলামকৃত সম্পত্তির বিবরণ সংবলিত যে সনদ দেন তা বায়নামা নামে পরিচিতবায়নামায় নিলাম ক্রেতার নামসহ অন্যান্য তথ্যাবলি লিপিবদ্ধ থাকে কোনো নিলাম বিক্রয় চূড়ান্ত হলে ক্রেতার অনুকূলে অবশ্যই বায়নামা দিতে হবে যে তারিখে নিলাম বিক্রয় চূড়ান্ত হয় বায়নামায় সে তারিখ উল্লেখ করতে হয় জমাবন্দি : জমিদারি আমলে জমিদার বা তালুকদারের সেরেস্তায় প্রজার নামজমি ও খাজনার বিবরণী লিপিবদ্ধ করার নিয়ম জমাবন্দি নামে পরিচিত। বর্তমানে তহশিল অফিসে অনুরূপ রেকর্ড রাখা হয় এবং তা জমাবন্দি নামে পরিচিত
দাখিলা : সরকার বা সম্পত্তির মালিককে খাজনা দিলে যে রশিদ প্রদান করা হয় তা দাখিলা বা খাজনার রশিদ নামে পরিচিত। দাখিলা কোনো স্বত্বের দলিল নয়তবে তা দখল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বহন করে। 
হুকুমনামা :  আমলনামা বা হুকুমনামা বলতে জমিদারের কাছ থেকে জমি বন্দোবস্ত নেয়ার পর প্রজার স্বত্ব দখল প্রমাণেরদলিলকে বুঝায়। সংক্ষেপে বলতে গেলে জমিদার কর্তৃক প্রজার বরাবরে দেয়া জমির বন্দোবস্ত সংক্রান্ত নির্দেশপত্রই আমলনামা
জমা খারিজ কিঃ   জমা খারিজ অর্থ যৌথ জমা বিভক্ত করে আলাদা করে নতুন খতিয়ান সৃষ্টি করা। প্রজার কোন জোতের কোন জমি হস্তান্তর বা বন্টনের কারনে মূল খতিয়ান থেকে কিছু জমি নিয়ে নুতন জোত বা খতিয়ান খোলাকে জমা খারিজ বলা হয়।
মৌজা কিঃ  ক্যাডষ্টাল জরিপের সময় প্রতি থানা এলাকাকে অনোকগুলো এককে বিভক্ত করে প্রত্যেকটি একক এর ক্রমিক নং দিয়ে চিহ্নিত করে জরিপ করা হয়েছে। থানা এলাকার এরুপ প্রত্যেকটি একককে মৌজা বলে। এক বা একাদিক গ্রাম বা পাড়া নিয়ে একটি মৌজা ঘঠিত হয়।
আপনার এবং আপনার ভবিষ্য প্রজন্মের বসবাস উপযোগী বসতভিটা এবং চাষাবাদযোগ্য জমিকে নির্ভেজাল রাখতে আপনি সচেতন হোন।

নেট থেকে সংগৃহীত